পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শাপলা হটলাইনে কল রিসিভ করলে অপর প্রান্ত থেকে একজন নারীর চিৎকার শুনতে পান। ওই নারী ভীত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাকে সাহায্য করুন, আমার স্বামী আমাকে মারধর করছে। আমি মরে যাচ্ছি।’

চলতি বছরের ২১ আগস্ট রাজধানীর ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার থেকে এই কলটি আসে।

পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমের (কিউআরটি) দায়িত্বে থাকা এসআই শাপলা তার দলকে জড়ো করেন এবং ঘটনাস্থলে যান। সেখানে তিনি একজন ২২ বছর বয়সী নারীকে তার স্বামীর হাতে নির্যাতিত হতে দেখেন।

দলটি ওই নারীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। অপরাধী-স্বামীকেও আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।

আরও পড়ুন: উন্নত দেশের মতো হবে বাংলাদেশ পুলিশ: আইজিপি

উদ্ধার করা নারীকে পরে তার বড় বোনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিউআরটি টিম তার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তিনি তার স্ত্রীর সাথে যথাযথ আচরণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

শাপলার কিউআরটি টিম উদ্ধার হওয়া ওই নারীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। দেখতে পায় যে তিনি তার স্বামীর কাছে ফিরে গেছেন এবং তারা শান্তিতে সংসার করছে।

তৃপ্তির হাসি নিয়ে শাপলা বলেন, আমি খুবই আনন্দিত যে আমরা একটি পরিবারে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। আমি আশা করি তারা এভাবেই বেঁচে থাকবে।

কিউআরটি টিমের দায়িত্বে থাকা আরেক উপপরিদর্শক (এসআই) আজমিন নাহার ইউএনবি’র সংবাদদাতাকে আরেকটি সাফল্যের ঘটনা বলেন।

২০২০ সালের নভেম্বরে আজমিন ৩০ বছর বয়সী এক নারীর কাছ থেকে একটি হটলাইনে কল পেয়েছিলেন। যিনি অভিযোগ করেছিলেন যে তার স্বামী তাকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করছেন। তিনি স্বামীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে হাজারীবাগের বাসা থেকে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়িতে পালিয়ে যেতে চান।

তিনি চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে তার স্বামী তাকে বাধা দিতে থাকে এবং রান্নাঘরের ছুরি দিয়ে তাকে আঘাত করছিল।

আরও পড়ুন: পুলিশের অপরাধ তদন্তে ‘স্বাধীন কমিশন’ চেয়ে করা রিটের আদেশ রবিবার

ওই নারীকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তার স্বামীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

২০১০ সালে উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ডব্লিউএসআইডি)অংশ কিউআরটি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি বিশেষ অপরাধ বিভাগ যা ১০টি এনজিও অংশীদারের সহযোগিতায় পুলিশ সংস্কার কর্মসূচির অধীনে চালু হয়েছে।

এই বাহিনীর একমাত্র উদ্দেশ্য হল নারী ও শিশুবান্ধব পুলিশিং ব্যবস্থা চালু করা এবং ঢাকা মহানগর পুলিশে নারীর ক্ষমতায়ন ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা।

ডব্লিউএসআইডি’র তথ্য অনুসারে, ডব্লিউএসআইডি গঠনের পর থেকে প্রায় ১৫ হাজার পরিবারকে বিচ্ছেদ থেকে রক্ষা করা হয়েছে।

এছাড়াও, কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) তাদের হটলাইন নম্বর ০১৩২০০৪২০৫৫ এর মাধ্যমে ৫৫০ জন নারী ও শিশুকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে।

আরও পড়ুন: জয়পুরহাটে এক ঘণ্টার পুলিশ সুপার স্কুলছাত্রী নুসরাত মাহিরা

ডব্লিউএসআইডির ডেপুটি কমিশনার হামিদা পারভীন ইউএনবি’র সাথে আলাপকালে বলেন, এই বিভাগের নারী পুলিশ সদস্যরা নারী ও শিশুবান্ধব পুলিশ সেবা নিশ্চিত করে আসছেন।

তিনি বলেন, তারা নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করছে এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। এছাড়া নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে তারা কাজ করছে।

একজন অতিরিক্ত ডিসি,দুই সহকারী কমিশনার (এসি), সাত ইন্সপেক্টর, ১৯ জন সাব-ইন্সপেক্টর, ২০ জন এএসআই  এবং ৫০ জন কনস্টেবল নিয়ে গঠিত ডিভিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হামিদা।

ডিভিশনের কুইক রেসপন্স টিম উদ্ধারকৃতদের আইনি ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে এবং হটলাইনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিযোগের যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করে।

ডিসি হামিদা বলেন, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, ইনভেস্টিগেশন ইউনিট, কুইক রেসপন্স টিম এবং ১০টি পার্টনার এনজিও তার দক্ষ ও পেশাদার মহিলা পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে মেট্রোপুলিশের মানসম্পন্ন সেবা এবং সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে ‘ফর বেটার অ্যান্ড সেফার ঢাকা’ নীতির ভিত্তিতে কাজ করছে।

আরও পড়ুন: পুলিশের হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী

বিভাগের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী / ২০০৩) এর অধীনে করা মামলার শিকারদের সহায়তা প্রদান করে। এটি নিখোঁজ নারী ও শিশুদের শনাক্ত করতে এবং সমস্যায় থাকা মহিলাদের উদ্ধার করতে সহায়তা করে।

ডব্লিউএসআইডি’র তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত, এই কেন্দ্রে মোট ছয় হাজার ৫৯৪ জন ভুক্তভোগীকে পরিসেবা দেয়া হয়েছে।